Saturday, September 15, 2012

মুরসির বিজয়ে আতঙ্কে ইসরাইল


এপি জেরুসালেম
মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রদারহুডের প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসিকে গত রোববার বিজয়ী ঘোষণা করায় ইসরাইলের নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইলি নেতারা মনে করছেন, মিসরে ইসলামপন্থী দলের বিজয়ে প্রতিবেশী দেশটির সাথে ১৯৭৯ সালে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি হুমকিতে পড়তে পারে। মুরসি নিজেও এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার কথা বলেছেন। দিকে মিসরে ব্রাদারহুডের বিজয়ে হামাসশাসিত গাজা ভূখণ্ডে উল্লসিত জনতা রাস্তায় নেমে আসে, ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং মিষ্টি বিতরণ করে।
মিসরের সাথে সম্পাদিত শান্তিচুক্তি ইসরাইলের নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি। কোনো আরব রাষ্ট্রের সাথে ইসরাইলের এটাই প্রথম ধরনের চুক্তি। পাঁচটি যুদ্ধ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর পর চুক্তির ফলে কয়েক দশকের বৈরিতার অবসান হয়। তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সব সময় উষ্ণ ছিল এবং মিসর সিনাই উপদ্বীপকে অসামরিক রাখে। ফলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষে ফিলিস্তিন, সিরিয়া লেবানন সীমান্তের দিকে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়।
এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি মিসরের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং শান্তিচুক্তি বহাল থাকবে বলে আশাবাদী। তিনি বলেন, ইসরাইল আশা করে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে মিসর সরকারের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। কেননা চুক্তি দুই দেশের জনগণের স্বার্থে এবং তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।
মিসরে এখনো সামরিক পরিষদ ক্ষমতায় থাকায় মিসরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী ইসরাইলি প্রতিরক্ষা কর্র্মকর্তারা বলেছেন, তারা এুনি সম্পর্কের পরিবর্তন আশা করছেন না। তবে তারা হুঁশিয়ার করে দেন, দীর্ঘ মেয়াদে ব্রাদারহুড শান্তিচুক্তি বাতিল করতে পারে। সংবেদনশীল নিরাপত্তা মূল্যায়ন সম্পর্কে আলোচনা করায় তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন।
গোটা মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে একটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯২৮ সালে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটি কখনোই লক্ষ্য পরিত্যাগ করেনি। তবে পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের পর তারা ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নেয়ার বাস্তবসম্মত ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছে। রোববার বিকেলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মোহাম্মদ মুরসি ঘোষণা করেন, তার কাছে শান্তির বার্তা আছে। ইসরাইলের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবো। ব্রাদারহুডের কয়েকজন নেতা যদিও বলেছেন তারা কখনোই ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন না। কিন্তু তারা চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। মিসরে ইসরাইলের সাবেক রাষ্ট্রদূত এলি শাকেদ বলেন, শান্তিচুক্তি বাতিল করলে মিসরের অনেক ক্ষতি হবে। যেমন পশ্চিমা বিনিয়োগ মার্কিন সাহায্য। তবুও তিনি হুঁশিয়ার করে দেন, চুক্তিটি এখন নিরাপদ নয়।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের আনন্দমিছিল
দিকে মিসরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্রাদারহুডের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার পর গাজা ভূখণ্ডে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাস্তায় নেমে আসে। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করা হতে থাকে এবং মসজিদগুলোতে লাউডস্পিকারে বিশেষ প্রার্থনা শোনা যায়। অনেকে রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করে। তারা এটিকে গাজার নতুন যুগের সূচনা বলে বর্ণনা করেন এবং মিসরের শাসকদের কারণে ফিলিস্তিনিদের যে দুর্দশা চলছিল, তার অবসান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন

No comments:

Post a Comment