স্টাফ রিপোর্টার : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক
উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, সংবিধান সংশোধন না করে নির্বাচন কমিশনকে
যতই শক্তিশালীই করাই করা হোক না কেন দলীয় সরকারের অধীনে কোনভাবেই দেশে
সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, বর্তমান অবস্থায়
সংবিধান অনুযায়ী দেশের শতভাগ ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। আর
অন্য সবার হাতে আছে শূন্য শতাংশ ক্ষমতা। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান
উপদেষ্টা বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটিই বিবেচ্য বিষয়। তাই বর্তমান
অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে দেশে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) আয়োজিত ‘দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা: উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গোল টেবিলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শাহ আবদুল হান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, বিশিষ্ট গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মোঃ মিজানুর রহমান, সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইমলাম, রাজনীতিবিদ ইসমাইল হোসের বেঙ্গল, এস এস এফ-এর সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) ফাতেমী আহমেদ রুমি, সাবেক সচিব এস এম জহুরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা, কমরেড নুরুল হক মেহেদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী বরকত আলী, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও গবেষক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, ইসলামিক পার্টির সভাপতি এডভোকেট আবদুল মোবিন, শিক্ষাবিদ সেলিনা ইসলাম প্রমুখ।
ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিতে তার কয়েকটি প্রস্তাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের আরও চারজন এবং বিরোধী দলের থেকে পাঁচজন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতে পারে। তবে সরকারি দলের কারা কারা এতে থাকবে তা ঠিক করবে বিরোধী দল। অনুরূপভাবে বিরোধী দলের কোন পাঁচজন আসবে তা ঠিক করবে সরকারি দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প আরও একটি প্রস্তাব দিয়ে আকবর আলি খান বলেন, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সর্বশেষ পাঁচ প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে থেকে যারা উপদেষ্টা হতে রাজি হবেন তারা নির্ধারণ করবেন তাদের মধ্যে কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন। এটি করতে হলেও সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া হলেও ইসির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা অন্য মন্ত্রণালয়গুলো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে যতই ক্ষমতা দেয়া হোক না কেন দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই তারা কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না। আকবর আলি খান বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করা এবং বর্তমানে এটি তুলে দেয়ার সময়ও সংসদে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যবস্থার স্থায়ী কোনো সমাধান হতে পারে না। এই ব্যবস্থায় কত দিন চলবে তা সে সময় নির্ধারণ না করা ছিল সব চেয়ে বড় ভুল।
তিনি বলেন, সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী যদি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে নির্বাচন দেয়া হয় ও ক্ষমতাসীনরা যদি ১০ শতাংশ আসন পায় এবং জালিয়াতির অভিযোগে ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করা হয়, তখন কি হবে? বিদ্যমান সংবিধানে এ সুযোগটি রয়ে গেছে। এটি সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন দিলে সংসদ সদস্যরা অন্যদের চেয়ে কিছু বেশি সুযোগ সুবিধা পাবে যা নির্বাচনে সমান সুযোগ তৈরির পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই আমলা।
আগামীতে কেউই আর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে সংঘাত ছিল, আছে ও থাকবে। তবে গত ৪০ বছরে কোনো অন্যায়-অবিচার টেকেনি। আগামী ৪০ বছরেও পারবে না। বর্তমানে যে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিয়েছে এর রাজনৈতিক সমাধান করতে হলে আগে আমাদের একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক উপায়ে করতে হবে। অরাজনৈতিক উপায়ে এটি সমাধান করবার চিন্তা করা ঠিক হবে না। অরাজনৈতিক কোনো কিছুই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোথাও টেকসই হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান। বিদ্যমান সংকট নিরসনে নির্দলীয় সরকারের ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
প্রবন্ধকারের উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো, এক. বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবার তিন মাস আগে মহাজোট সরকার পদত্যাগ করবে ও একটি নির্দলীয় সরকার শুধু তিন মাসের জন্য দায়িত্ব নেবে। দুই. একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল' নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নিবে, যারা শুধু নির্বাচন পরিচালনা করবে। তিন. একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির (অথবা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির) নেতৃত্বে সাংবিধানিক পদে অধিকারীদের নিয়ে একটি সরকার। চার. স্পিকারের নেতৃত্বে দু'টি বড় দলের পাঁচজন করে নিয়ে একটি সরকার। তবে তারা কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। পাঁচ. যৌথ নেতৃত্বে (একজন বিএনপি ও একজন আওয়ামী লীগের মনোনীত) একটি নির্দলীয় সরকার, যাদের কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং ছয়, সর্বশেষ হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সরকার।
সৈয়দ আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশে যে প্রক্রিয়াতেই হোক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। সরকার যদি কোন প্রকার একটি সাজানো নির্বাচন দিয়ে পার পেতে চায় তাহলে জনগণের দাবির কাছ থেকে পার পাবেন না। জনরোষে তাদের পড়তেই হবে। জনগণ কোন সাজানো বা পাতানো নির্বাচন কখনোই মানবে না।
নুরুল হক মেহেদী বলেন, সেমিনার করে কিংবা গোলটেবিল করে হয়তো সরকারকে হটানো সম্ভব হবে না কিন্তু রাজপথের আন্দোলনকে শাণিত করতে হলে এই সেমিনারের অন্য কোন বিকল্প নেই। রাজপথের আন্দোলন শুরু হতে হবে এই সেমিনার থেকেই।
এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন দেশে বর্তমানে যে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে এসে সমাধানের পথে এগুতে হলে আমাদের বড় দু'টি দলকেই সমঝোতার পথে যেতে হবে। অন্যথায় সংঘাত অনিবার্য। তিনি আফ্রিকার হুতু ও তুতসী দু'টি সম্প্রদায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সমঝোতার পথে না গিয়ে তারা কিন্তু পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল। আমাদের এখন ভেবে দেখতে হবে আমরা সমঝোতা করে সমাধানের পথে এগিয়ে যাব নাকি অনিবার্য সংঘাত টেনে আনবো। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দেশ এবং জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা না করে সমঝোতা হলে এটা হবে আমাদের জন্য জাতিগতভাবে আত্মহত্যার নামান্তর।
সভাপতির বক্তব্যে শাহ আবদুল হান্নান বলেন, চলমান সংঘাত ও সংকট দূর করে দেশকে একটি সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান দেখাতে হবে। আর আগামীতে কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেশবাসীর সেই কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করে সমাধানে পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় দেশের এবং জনগণের যে ক্ষতি হবে তা কখনোই পূরণ হবার মতো নয়।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) আয়োজিত ‘দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা: উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গোল টেবিলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শাহ আবদুল হান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, বিশিষ্ট গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মোঃ মিজানুর রহমান, সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইমলাম, রাজনীতিবিদ ইসমাইল হোসের বেঙ্গল, এস এস এফ-এর সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) ফাতেমী আহমেদ রুমি, সাবেক সচিব এস এম জহুরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট ফেরদৌস আক্তার ওয়াহিদা, কমরেড নুরুল হক মেহেদী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজী বরকত আলী, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও গবেষক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, ইসলামিক পার্টির সভাপতি এডভোকেট আবদুল মোবিন, শিক্ষাবিদ সেলিনা ইসলাম প্রমুখ।
ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিতে তার কয়েকটি প্রস্তাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের আরও চারজন এবং বিরোধী দলের থেকে পাঁচজন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতে পারে। তবে সরকারি দলের কারা কারা এতে থাকবে তা ঠিক করবে বিরোধী দল। অনুরূপভাবে বিরোধী দলের কোন পাঁচজন আসবে তা ঠিক করবে সরকারি দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প আরও একটি প্রস্তাব দিয়ে আকবর আলি খান বলেন, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সর্বশেষ পাঁচ প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে থেকে যারা উপদেষ্টা হতে রাজি হবেন তারা নির্ধারণ করবেন তাদের মধ্যে কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন। এটি করতে হলেও সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া হলেও ইসির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা অন্য মন্ত্রণালয়গুলো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে যতই ক্ষমতা দেয়া হোক না কেন দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই তারা কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না। আকবর আলি খান বলেন, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করা এবং বর্তমানে এটি তুলে দেয়ার সময়ও সংসদে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যবস্থার স্থায়ী কোনো সমাধান হতে পারে না। এই ব্যবস্থায় কত দিন চলবে তা সে সময় নির্ধারণ না করা ছিল সব চেয়ে বড় ভুল।
তিনি বলেন, সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী যদি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে নির্বাচন দেয়া হয় ও ক্ষমতাসীনরা যদি ১০ শতাংশ আসন পায় এবং জালিয়াতির অভিযোগে ওই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করা হয়, তখন কি হবে? বিদ্যমান সংবিধানে এ সুযোগটি রয়ে গেছে। এটি সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন দিলে সংসদ সদস্যরা অন্যদের চেয়ে কিছু বেশি সুযোগ সুবিধা পাবে যা নির্বাচনে সমান সুযোগ তৈরির পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই আমলা।
আগামীতে কেউই আর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে সংঘাত ছিল, আছে ও থাকবে। তবে গত ৪০ বছরে কোনো অন্যায়-অবিচার টেকেনি। আগামী ৪০ বছরেও পারবে না। বর্তমানে যে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিয়েছে এর রাজনৈতিক সমাধান করতে হলে আগে আমাদের একটি লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক উপায়ে করতে হবে। অরাজনৈতিক উপায়ে এটি সমাধান করবার চিন্তা করা ঠিক হবে না। অরাজনৈতিক কোনো কিছুই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোথাও টেকসই হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান। বিদ্যমান সংকট নিরসনে নির্দলীয় সরকারের ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
প্রবন্ধকারের উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো, এক. বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবার তিন মাস আগে মহাজোট সরকার পদত্যাগ করবে ও একটি নির্দলীয় সরকার শুধু তিন মাসের জন্য দায়িত্ব নেবে। দুই. একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল' নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নিবে, যারা শুধু নির্বাচন পরিচালনা করবে। তিন. একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির (অথবা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির) নেতৃত্বে সাংবিধানিক পদে অধিকারীদের নিয়ে একটি সরকার। চার. স্পিকারের নেতৃত্বে দু'টি বড় দলের পাঁচজন করে নিয়ে একটি সরকার। তবে তারা কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। পাঁচ. যৌথ নেতৃত্বে (একজন বিএনপি ও একজন আওয়ামী লীগের মনোনীত) একটি নির্দলীয় সরকার, যাদের কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং ছয়, সর্বশেষ হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সরকার।
সৈয়দ আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশে যে প্রক্রিয়াতেই হোক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। সরকার যদি কোন প্রকার একটি সাজানো নির্বাচন দিয়ে পার পেতে চায় তাহলে জনগণের দাবির কাছ থেকে পার পাবেন না। জনরোষে তাদের পড়তেই হবে। জনগণ কোন সাজানো বা পাতানো নির্বাচন কখনোই মানবে না।
নুরুল হক মেহেদী বলেন, সেমিনার করে কিংবা গোলটেবিল করে হয়তো সরকারকে হটানো সম্ভব হবে না কিন্তু রাজপথের আন্দোলনকে শাণিত করতে হলে এই সেমিনারের অন্য কোন বিকল্প নেই। রাজপথের আন্দোলন শুরু হতে হবে এই সেমিনার থেকেই।
এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন দেশে বর্তমানে যে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে এসে সমাধানের পথে এগুতে হলে আমাদের বড় দু'টি দলকেই সমঝোতার পথে যেতে হবে। অন্যথায় সংঘাত অনিবার্য। তিনি আফ্রিকার হুতু ও তুতসী দু'টি সম্প্রদায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সমঝোতার পথে না গিয়ে তারা কিন্তু পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল। আমাদের এখন ভেবে দেখতে হবে আমরা সমঝোতা করে সমাধানের পথে এগিয়ে যাব নাকি অনিবার্য সংঘাত টেনে আনবো। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, দেশ এবং জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা না করে সমঝোতা হলে এটা হবে আমাদের জন্য জাতিগতভাবে আত্মহত্যার নামান্তর।
সভাপতির বক্তব্যে শাহ আবদুল হান্নান বলেন, চলমান সংঘাত ও সংকট দূর করে দেশকে একটি সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান দেখাতে হবে। আর আগামীতে কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেশবাসীর সেই কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করে সমাধানে পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায় দেশের এবং জনগণের যে ক্ষতি হবে তা কখনোই পূরণ হবার মতো নয়।
No comments:
Post a Comment